এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, দেশে মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা খুবই কম। ফলে বাড়ছে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা। তারপরও বিচারকরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন মামলাজট কমানোর। চলছে নতুন বিচারক নিয়োগের কার্যক্রম। এ দেশে ৪০ লাখ মামলার জন্য বিচারকের সংখ্যা মাত্র দুই হাজার। এ বিচারকের সংখ্যা একবারেই কম। ইতোমধ্যেই ১০২ জন বিচারকের নিয়োগের কাজ চলছে।
আজ ১২ এপ্রিল বুধবার সকালে ঝিনাইদহ আদালত প্রাঙ্গণে বিচার প্রার্থীদের বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জের’ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এ রাষ্ট্রের মলিক জনগণ। কোর্টে আগত বিচার প্রার্থীদের কষ্ট লাঘবের জন্য কাজ করছি আমরা। এজন্য জেলায় জেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে ন্যায়কুঞ্জ। এলক্ষ্যে সরকার ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিটি জেলায় কমবেশি ৫০ লাখ টাকা করে দেয়া হবে ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণে।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার তোফায়েল হাসান, ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নাজিমুদ্দৌলা, জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইমলাম, পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান পিপিএম বিপিএম বার, জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড.ইসমাইল হোসেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড.রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আকিদুল ইসলাম,জিপি এড. বিকাশ কুমার ঘোষ,সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. আজিজুর রহমান,এ্যাড. এস এম মসিউর রহমান,ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এম এ কবীর সহ জেলার আইনজীবীরা।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্টে গত বছর ৮২ হাজার মামলা ফাইল হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে ৭৯ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ নিষ্পত্তি হয়েছে শতকরা ৯৫ ভাগ। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, বিচারকরা পরিশ্রম করেই মামলাজট সুরাহা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আইনজীবীদের আদালতকে সহায়তা করতে হবে। যাতে করে সবাই একসঙ্গে মামলাজট কমাতে পারি।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, এই দেশের মালিক জনগণ। প্রতিদিন আদালত প্রাঙ্গণে শত শত লোক বিচারের আশায় আসেন। তাদের বসার কোনো জায়গা নেই। এসব চিন্তাভাবনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিচারপ্রার্থীরা যাতে আদালতে এসে একটু স্বস্তিতে বসতে পারেন। সেটাই আজকের এই ‘ন্যায় কুঞ্জে’র কনসেপ্ট।
প্রধান বিচারপতি গতকাল সকাল ১১টায় ঝিনাইদহ জজ আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন।
পরে প্রধান বিচারপতি ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক মত বিনিময় সভায় যোগ দেন। এ সময় তিনি দুর্নীতি একটি ক্যানসার উল্লেখ করে বলেন, আমার হাতে পাঁচটি আঙুল আছে। যদি একটি আঙুলে ক্যানসার হয় তাহলে বড় চিকিৎসা হচ্ছে সেটা কেটে ফেলা। যে জজ বিচার বিক্রি করে সে জজকে আঙুল হিসেবে কেটে ফেলতে আমি একটু দ্বিধা করবো না। তিনি আরও বলেন, একজন ডাকাত চড়-থাপ্পড় মেরে গহনা নিয়ে যায় কিন্তু একজন জজ যদি বিচারের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে একজনের সম্পদ অন্যজনের দিয়ে দেয় তাহলে সে ডাকাতের চেয়েও খারাপ। এমন অন্যায়ের জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এদেশের মানুষ যাতে স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার পান সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সৃষ্ট মামলাজট নিরসনে বিচারকদের বলা হয়েছে। আদালতে সেবা নিতে আশা মানুষ যাতে কোনো কষ্টে না পড়েন সেদিকেও নজর রাখছি। আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে এ ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণ করা হচ্ছে।’ এর আগে প্রধান বিচারপতি আদালত চত্বরে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। পরে তিনি মাগুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
Leave a Reply